Gottfried Mentor-এর সঙ্গে ছ'মিনিট ছত্রিশ সেকেন্ড ।। রিয়া চক্রবর্তী
- Avijit Mitra
- May 9, 2021
- 3 min read

সেই কতও কতোদিন ধরে খেলাটা চলছে তো চলছেই, একই নিয়মে। কিন্তু আমাদের কিছুতেই ক্লান্তি আসছে না। সব জেনে, বুঝে, বিতর্ক ও বিশ্লেষণকে পার করে আবারও আমরা ঘুঁটি সেজে অপেক্ষা করছি খেলাটা শুরু করার জন্য। যতক্ষণ সেটা শুরু না হচ্ছে ততক্ষণ শুধু সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে যেতে হবে। ব্যাস। এইটুকুই।
আজকে যে ছ'মিনিট ছত্রিশ সেকেন্ডের ছবিটা নিয়ে কথা বলবো, তাতে এই খেলাটাকে ধরে ফেলার, খেলার কথা আছে। ঐটুকু পরিসরে পরিচালক ইতিহাসের একটা সূত্রকে প্রমাণ করেছেন। অ্যানিমেশনে তৈরি একটা শর্ট ফিল্ম। নাম : 'Oh Sheep!' ; পরিচালক একজন বছর চল্লিশের ফ্রান্সের বাসিন্দা ; নাম : Gottfried Mentor.
আমার দেশে, এই সময় দাঁড়িয়ে, যতবার আমি সব বোঝার পরেও, অন্য অন্য তথ্যের স্তূপে ঢুকে এই ছবিটার কথা ভুলে যাবো, ততবার আমি এই ছবিটাকে ফিরে ফিরে দেখতে চাই। কী এমন আছে এই ছবিটায়, যার ভিত্তিতে এমন সব কথা পাঠককে শুনতে হচ্ছে? কিচ্ছু না। কটা ভেড়ার গল্প। আর আছে তাদের দু'জন মালিক।
একদিন হলো কী, দুই মালিক তাদের নিজের নিজের ভেড়াদের নিয়ে মাঠে এলেন। কিন্তু মালিকরা পরস্পরকে দেখে খুশি না হলেও, ভাড়ার দল কিন্তু ভারি খুশি। একসাথে খেলায় মেতে উঠতে যাবে যাবে করছে, ঠিক এমন সময় মালিকদের হুংকার। আসলে ভেড়ারা এক হয়ে গেলে দু'জন মালিকের অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে কিনা। যতক্ষণ ভেড়া, ততক্ষণই মালিকানা।
তাই লাঠি আর হাতুড়ি দিয়ে বেড়া বেঁধে ভেড়াদের আলাদা রাখা হলো। যাক্ বাবা, এবার নিশ্চিন্ত! ভেড়ার দৌড় বেড়া অবধি - এ কথা কে না জানে। কিন্তু গোল বাধলো জানেন। দু'পাশের ভেড়ারা মাথা দিয়ে গুঁতিয়ে ভেঙে দিল সেই কাঠের বেড়া। মিলে গেল আবার। একে অপরকে পেয়ে সে কী আনন্দ।
এবার মালিকরা কাঁটাতার বাঁধলেন। যার দুই প্রান্তে দুই দল ভেড়া। হুঁ হুঁ বাবা! এবার? কাঁটাতারের এপার থেকে ওপারে তারা মুখ ঢুকিয়ে পরস্পরকে ছোঁয়। তাদের চোখে ব্যথা সব কথা বলে যায়। না না, দর্শক, এটা কোনও দেশভাগের প্রতীকী কথা নয় শুধু। এমন অসংখ্য কাঁটাতার আমাদের চারদিকে। তা একদিন হলো কী, একটা বেয়াড়া ভেড়া কাঁটাতার টপকে ওপাশে যাওয়ার জন্য মস্ত এক লাফ দিলো। কিন্তু সফল হতে পারলো না। কাঁটাতারে আটকে, মরে ঝুলে রইলো। (বেশ কয়েক বছর আগে এক কিশোরীর গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ যেমনভাবে ঝুলে ছিল ভারত-বাংলাদেশের কাঁটাতারে, তেমনি আর কি!) কিন্তু এই চেষ্টাটা একটা কাজ করলো। মালিকের মনে ভয় ধারালো। এভাবে যদি ভড়াগুলো মরতে থাকে, তাহলে মালিকের চলে কী করে?
তাই এবার তারা পাথরের উপর পাথর গেঁথে দেওয়াল তুলে দিলো। বিমর্ষ ভেড়ার দল পরস্পরের কণ্ঠস্বর শোনে। কিন্তু দেখতে পায় না কেউ কাউকে। আবার একদিন সব অসহ্য হয়ে উঠলো। ভেড়ারা আবার আগের মতো ঢুঁশিয়ে ভেঙে দিতে চাইল দেওয়াল। আহত, রক্তাক্ত, নিহত হয়ে পড়ে রইলো তারা। দেওয়াল ভাঙলো না। কটা ছুটকো পাথর খসে পড়লো শুধু। কিন্তু এভাবে যদি ভেড়ারা ক্ষতবিক্ষত হয়, তাহলে মালিকের (বা রাষ্ট্রের) ব্যবসা যে মার খাবে। এবার তাই আবার আলোচনায় বসলো দুই মালিক।
এবার এক্কেবারে জব্বর প্ল্যান! ভেতর থেকে ভাঙতে হবে ওদের। ওদের এই ভালোবাসাটাকে ঘেন্নায় রূপান্তরিত করতে হবে। তাহলেই কেল্লা ফতে! এবার তারা করলো কী, কাঁচি দিয়ে ভেড়াদের লোম কেটে, দুটো ভিন্ন রকমের ডিজাইন করে, তারা এক এক পক্ষকে চিহ্নিত করে রাখলো। তারপর বেড়া, কাঁটাতার, পাথরের দেওয়াল সব উধাও।
আর এখান থেকেই মারাত্মক হয়ে উঠলো খেলাটা। ভেড়ারা একে অপরের দিকে ছুটে এসে পরস্পরকে আদর করতে গিয়ে দেখল- আরে! এ আবার কে? একে তো চিনি না! আমার গায়ের কারুকাজের সঙ্গে ওর গায়ের কারুকাজ তো মিলছে না!
এবার তারা পরস্পরকে আঘাত করতে থাকলো। অপরকে মেরে শুইয়ে দিলো চিরদিনের মতো। এভাবে তারা সবাই একদিন মরে গেল।
এই অবধি এসে আমার মনে পড়ছে ধর্মের কথা, গুজরাট দাঙ্গার কথা, রাম মন্দিরের কথা, ইমাম ভাতার কথা, দলিত আর উচ্চবর্ণের কথা... কতও কতও কথা। সবই তো ঐ কারুকাজের খেলা, তাই না পাঠক? আমি বুঝতে পারছি, এ প্রশ্নের উত্তরে আপনি সম্মতিসূচক ভঙ্গিতে ঘাড় নাড়ছেন। তার মানে আমি ও আপনারা সবাই বুঝতে পেরে গিয়েছি সবটা। তাহলে ধরে নিতেই পারি ভিন্ দেশের এক পরিচালক সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের দেশের কথাকে মিলিয়ে দিয়ে আমাদের অ্যাকিলিস হিল-টাকে চিনিয়ে দিয়ে গেলেন। এবার তাহলে আর কোনও দাঙ্গা হবে না, ফ্রিজে গরুর মাংস পেয়ে কাউকে পিটিয়ে মারা হবে না, গোধরা কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হবে না, কোনও পাদ্রীকে শিশুপুত্র সহ বন্ধ গাড়িতে পুড়িয়ে মারা হবে না... হবে না... হবে না... হবে না...
হাঃ! এমনটা যদি সত্যিই, সত্যি হতো! আমরা যদি এমন জ্ঞানপাপী না হতাম! তাহলে...
Make a Donation
A/C: 40910100004585
IFSC Code:BARB0BUDGEB
Bank Name: Bank Of Baroda
Name in Bank: BHAAN
Comments