//azoaltou.com/afu.php?zoneid=3651748 //azoaltou.com/afu.php?zoneid=3683887
top of page
Search

অতিমারী ও বাংলা থিয়েটার


সস্মিত চক্রবর্তী

এক পচে যাওয়ার সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি আমরা সবাই। এই সংকটের সময় ভালো কি সত্যিই আছি আমরা!! যদি পাশের মানুষের মুখের দিকে তাকাই তাহলে সবটাই ফ্যাকাশে লাগে। আলোয় আলোকিত মুখগুলো এখন অন্ধকারের অতলে পরে থাকা করুন মুখ গুলোর মতই হয়ে আছে।থিয়েটারও এর বাইরে নয়। এই অতিমারির বাউন্সার প্রায় সবার শরীরেই ধাক্কা খেয়েছে। গোটা পৃথিবীর থিয়েটার এই বাউন্সার সহ্য করতে পারেনি। থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অনেক মানুষ অন্য ভাবে বাঁচার চেষ্টা করছে। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। যাই হোক এই নিয়ে বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হয় আমি সেইসব দিকে আমিও খানিক পা বাড়াচ্ছি। এই অতিমারি আমাদের শিখিয়েছে পাশের মানুষকে স্পর্শ করো না দূরে থাকো, কিন্তু থিয়েটার করতে করতে আমি জেনেছি থিয়েটার আসলে একটা স্পর্শের কথা বলে। অভিনেতার সঙ্গে অভিনেতার। অভিনেতার সঙ্গে দর্শকের। আলোর সাথে মঞ্চের। রূপসজ্জার সঙ্গে মিউজিকের। বহুকাল আগে প্লেগ নামে এক অতিমারি মানুষকে এক ইয়র্কারের সম্মুখীন করেছিল। তখনও থিয়েটার তার নিজের ভঙ্গিতে ডিফেন্স করেছে। থিয়েটারের মত একটা আর্ট কে সহজে আউট করা যায় না। কিন্তু কথা হচ্ছে এই অতিমারির আগে কেমন করে ব্যাটিং করছিলাম আমরা। মাসে হাত খরচা থেকে কোনমতে ১০০ টাকা জমিয়ে নাটক দেখতে যেতাম। আসলে কিছু নতুন দেখার লোভে হয়তো দেখতে যেতাম। কিন্তু যখন নতুন কিছু দেখতে পেতাম না কিংবা একটা অন্য মুহূর্ত দেখতে পেতাম না তখন বড্ড হতাশ লাগতো। আমার শিক্ষকরা শিখিয়েছেন যে ভালোর সঙ্গে খারাপটাও তোমায় দেখতে হবে, শিখতে হবে কারণ ওই ভুলটা যাতে আমি না করি। ধীরে ধীরে খারাপের সংখ্যাটা একটু একটু বাড়তে লাগলো। তা বলে কি ভালো থিয়েটার হচ্ছে না , হচ্ছে তো। তবে সংখ্যায় খুব কম। আর আমাদের সমাজে যার সংখ্যা বেশি তাকেই গণ্য বলে মনে করি। আমার একটি লেখা দিয়ে খানিক আমার কথা বোঝানোর চেষ্টা করছি।

কথোপকথন – ১০

– পুর্ণেন্দু পত্রী

– কাল বাড়ি ফিরে কী করলে?

– কাঁদলাম। তুমি?

– লিখলাম।

– কবিতা? কই দেখাও।

– লিখেই কুচিকুচি।

– কেন?

– আমার আনন্দের ভিতরে অনর্গল কথা বলছিল আর্তনাদ

আর্তনাদের ভিতরে গুনগুন গলা ভাঁজছিল অদ্ভুত এক শান্তি

আর শান্তির ভিতরে সমুদ্রের সাঁইসাঁই ঝড়।

যে সব অক্ষর লিখলেই লাল হওয়ার কথা

তারা হয়ে যাচ্ছিল সাদা।

যে সব শব্দ সাদা কাশবন হয়ে দুলবে

তাদের মনে হচ্ছিল শুকনো পাতার ওড়াউড়ি।

বুঝলাম সে ভাষা আমার জানা নেই

যার আয়নায় নিজের মুখ দেখবে ভালোবাসা।

– তাই বলে ছিঁড়ে ফেললে?

– বাতাস থেকে একটা অট্টহাসি লাফিয়ে উঠে বললে পিদিমের সলতে হয়ে আরো কিছুদিন পুড়ে খাক হ। পুড়ে খাক হ।


এই যে কবিতা এটা পড়ে আমি খানিকক্ষণ চুপ ছিলাম। কেন ছিলাম জানিনা কিন্তু ছিলাম। এই সংলাপ কি আমায় চুপ করে রেখেছিল। তাও জানিনা। আমি বলছি যে প্রায় বেশিরভাগ থিয়েটারের পারফর্মেন্স শেষে আমি এরকম চুপ থাকি না। হল থেকে বেরিয়েই হাহা হিহি করে চা খাই। মেট্রো ধরি। ফোন দেখি। ঘুমিয়ে পরি। আবার কোন পারফরম্যান্স দেখে এমনও হয়েছে যে সেই রাতে ঘুমোতে একটু কষ্ট হয়েছে। কিন্তু ওই যে সংখ্যাটা কম। আবার আমি এমনও দেখেছি যে দুইদলের মানুষ আছে একদল যারা ইউরোপিয়ান থিয়েটার বা প্রসেনিয়াম থিয়েটার দেখতে ভালোবাসেন আরেকদল ইন্টিমেট থিয়েটার বা ফোক থিয়েটার দেখতে ভালোবাসেন। আমি মনে করি এই দুই আর্টফর্ম কিন্তু ওই স্পর্শের কথা বলে অভিনেতার সঙ্গে দর্শকের। যাইহোক আমি এই দ্বন্দ্বতে যাচ্ছি না যে কোনটা শ্রেষ্ঠ। আমার কাছে দুটোই থিয়েটার। এই দিনের পর দিন খারাপ থিয়েটার হয়ে যাওয়ার এক বিরাট কারণ হলো রাজনীতি। তোষামোদের রাজনীতি। পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি। যা দিনের পর দিন ধরে থিয়েটার কে আঘাত করে চলেছে। আসলে আমরা সবটাই বুঝি। জানি। কিন্তু কিছু বলি না। চুপ করে থাকি।কথা বললেই হয়তো নম্বর কাটা যাবে। হয়তো এই লেখা লিখতে গিয়ে আমিও খানিক ভয় পাচ্ছি আমার নম্বর কাটার।



কিছুদিন আগে একটা ফেসবুক পোস্ট যেটা দেখে আমি খানিক চমকে গিয়েছিলাম। শ্রী আলোক দেবনাথ। যিনি তাঁর তুলির টানে একজন অভিনেতাকে চরিত্রে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন। তিনি তার কাছে থাকা কিছু উইগ বিক্রি করবেন। হয়তো এই উইগ পরে কেউ হয়েছেন রাজা।মন্ত্রী।ভিখারি।কতটা খারাপ সময় গেলে এরকম একটা কাজ করতে হয় একজন শিল্পী কে। এইটাতো হওয়ার কথা ছিল না। কোন রুপো কাঠি স্পর্শ করলে আবার ম্যাজিক ঘটবে,সব নতুন হবে সেও আমি জানি না।

একজন ছাত্র হিসেবে আমার শুধু একটা কথাই বলার যে এই অতিমারির পরে মানুষজনকে আরো অনেক থিয়েটারমুখী করে তুলতে হবে। যাতে আর কোনো অতিমারি আমাদের আর আঘাত করতে না পারে। কারণ আমি বিশ্বাস করি ভালো থিয়েটারে মানুষ হল ভরিয়ে দেন। আর সেই থিয়েটার আমরা গোগ্রাসে দেখবো। সবাই হয়তো ভাবছেন যে আমি খামোখা কেন চারটি খারাপ কথা বললাম। আবার এইটাও খাঁটি সত্যি যে থিয়েটার না থাকলে হয়তো আমি আজ এই লেখাটা হয়তো লিখতে পারতাম না।প্রেমিকাকে ভালোবাসি বলেই তো প্রেমিকাকে নিয়ে বলা যায় তাই না।

 
 
 

Comments


Subscribe to Site

Thanks for submitting!

© 2020 Bhaan Theatre | Designed by Capturegraphics.in
bottom of page