//azoaltou.com/afu.php?zoneid=3651748 //azoaltou.com/afu.php?zoneid=3683887
top of page
Search

আমাদের হতে চাওয়া 'আমি' কে ফিরিয়ে দেয় তাঁর ছবি' অনুভব করলেন- অণ্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায়


ree

অণ্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায়


ফিরে পাওয়া আমিকে

প্রথমেই বলি এই লেখা অত্যন্ত দুঃসাহসিক কাজ, অন্তত আমার কাছে তো তাই-ই। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর

ছবির মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। বরং ওঁর ছবির মাধ্যমে যে হারিয়ে যাওয়া আমিকে

আমরা ফিরে পেয়েছি, আমরা সেটুকুর সচেতনতা তৈরি করা। তাই লেখা শুরু করলাম প্রশ্ন দিয়ে যাতে ভাবনার

উদ্রেক হয়।


ree


আচ্ছা আপনাদের মনে পড়ে আপনারা ছোটবেলায় কীভাবে ভাবতেন? ছোটবেলার ভাবনার সঙ্গে যখন বড়

হওয়া জুড়তে থাকল তখন ভাবনা কীভাবে দিক পরিবর্তন করল? লক্ষ করেছি আমরা? একটা সময়ের পর

আমরা কেউ কিন্তু ছোটবেলার মত করে আর বড়বেলায় ভাবতে পারলাম্ না। কিন্তু কিছু মানুষ শুধু বড়র মতই

দেখতে হলেন। গাছের কাছে দাঁড়িয়ে তাঁরা স্থির করলেন গাছেদের গল্পই বলবেন বা গাছে যারা বসবাস করে

তাদের গল্প। তখন তাদের মনের রঙে ছোটবেলার রঙ আর সাদা কালো রইলনা। তাঁরা ঠিক করলেন এই যে

মনের অবাধ যাতায়াত যেখানে বাস্তব স্বপ্ন মিশে যেতে পারে, সেখানে কল্পনার কোন গণ্ডি আঁকা

থাকবেনা। সেখানে চরিত্ররা হবেন এমন একজন যেমনটা আসলে আমরা সবাই হতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি।


ree

আমাদের চারপাশ সেই ‘আমি’ হয়ে ওঠাকে প্রশ্রয় দেয়নি। আর সত্যি বলতে কী, নিজেদের মধ্যে আসল

আমিকে খুঁজে পেতে কার না ভাল লাগে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত এই প্রথম সেই বিভিন্ন আমিদের সঙ্গে আলাপ

করাতে এলেন তাঁর সিনেমাতে। যাদের দেখে মনে হল ঠিক এই এরকমই একজন মানুষই তো হতে চেয়েছি

আমরা সব্বাই। তাঁর সবচেয়ে চর্চিত ছবি ‘চরাচর’-এর কথাই যদি বলি, আচ্ছা আমরা কি কেউ

লক্ষ্মীন্দরের মত চাইনি পাখিরা আমাদের বন্ধু হয়ে উঠুক, এই পৃথিবী মানুষের চেয়ে অনেক বেশি হোক

পাখির, এমনটা চাইনি আমরা। একটা সময় আমাদের সকলের জীবনে সত্যিই ছিল যখন আমরা সবাই

পাখিদের বন্ধু হতে চেয়েছি, পাখির মৃত্যু, পাখির শিকার এমনকি পাখির মাংসও আমাদের কষ্ট দিয়েছে,

এখনো হয়ত দেয় কিন্তু বড়বেলায় ফ্ল্যাটের ই.এম.আই আর চাকরির প্রোমোশনের চাপে এসব নিয়ে আর

মাথা ঘামা্নোর সময় পাইনা। এখন আমাদের ভেতরের লক্ষ্মীন্দররা ঘুমিয়ে গিয়েছে, বা তাদের ঘুমোতে বাধ্য

করা হয়েছে, তাই ক্ষণিকের জন্য জেগে থাকা সিনেমার লক্ষ্মীন্দরের পরিণতি আমাদের মতই হোক এমনটা

চাইনি আমরা এবং এমনটা হয়ও নি, লক্ষ্মীন্দর পেরেছিল পাখিদের বন্ধু হতে ,লক্ষ্মীন্দর হয়ে উঠেছিল

মনস্তত্বের ভাষায় ‘আইডিয়াল সেলফ’, আর ‘চরাচর’ হয়ে উঠেছিল উচ্চমানের সিনেমা।


ree

আমাদের সকলেরই ছোটবেলা বলতেই মনে পড়ে স্কুল। আর নিজের স্কুল তা যতই অনামী, ভাঙাচোরা,

বিদঘুটে নামেরই হোক না কেন তা নিয়ে আমাদের নস্টালজিয়া আজীবন, আর সেই নিয়ে গল্প তৈরী হল

‘জানালা’-এর। খুব কম রোজগার করা বিমল চাইল নিজের স্কুলকে একটা সুন্দর জানালা দিতে, একদম

স্বপ্নের মত ডিজাইন করা জানালা। একদিন স্কুলে ভূগোলের ক্লাসে যখন মাস্টারমশাই বিভিন্ন অজানা

দেশের অজানা সমুদ্রের কথা বলছিলেন বিমল সেই সময় জানলা দিয়ে সত্যি সত্যিই যদি সমুদ্রের ঢেউ

দেখতে পেয়েছিল, ওর পায়ে এসে ঢেউ ছুঁয়ে গিয়েছিল। কারন এ কথা সত্যিই আমরা যখনই কিছু শুনি বা জানি

আমাদের মস্তিস্কে সেই তথ্যের ছবি আঁকা হয়ে যায়। আর ছোটবেলার ভাবনায় সেই দেখতে পাওয়া অনেক

গভীর আর স্বতঃস্ফূর্ত।


ree

আমরা এখনো যদি মনের গভীরে একটু উঁকি দিই তবে দেখতে পাব এরকম অনেক স্বপ্ন অনেক ভাবনা

আমরা এঁকেছি মনে মনে কিন্তু বলার সাহস পাইনি কখনো। আসলে সমাজের একটা নিজস্ব গণ্ডি আছে,

যেটার বাইরে গেলেই ‘পাগল’ বলে দেগে দেওয়া হয় আমাদের। তাই অনেক সময় নিজের এমন অনেক

ভাবনাকেও বলি ‘এসব কী পাগলের মত ভাবছি’। এবং আমরা কেউই নিজেকে ‘পাগল’ ভাবতে ভালবাসিনা। দেগে

দেওয়া পাগলেরাও বাসেনা। কিন্তু এ কথাও খুব সত্যি মনস্তত্বে ভাবনার নির্দিষ্ট কোন স্রোত থাকেনা,

কারন ভাবনার পরিধি অনেক বিস্তর…আমরা কিছু নিয়মের আওতায় নিজেদের ভাবনাকে বেঁধে রাখতে বাধ্য

হই। তাই যে মূর্তি আমি শুধু কল্পনায় ভেবেছি তারই যখন প্রতিফলন পর্দায় দেখি, তখন আর সেই

মুহূর্তের জন্য নিজেকে ‘একা’, ‘পাগল’ এইসব মনে হয়না, বিশ্বাস করতে সুবিধা হয় বাস্তবের সঙ্গে

পরাবাস্তবের সম্পর্ককে। আর যখন সিনেমার পর্দায় দেখি প্রোটাগনিস্ট আমারই মনের কথা বলছে, ঠিক


ree

সেই মুহূর্তেই মনে হয় এই মানুষটাই তো আমি। আমরা কিন্তু প্রত্যেকে আসলে চাই পর্দায় বলা গল্পের

সঙ্গে নিজেদের জীবনকে মিলিয়ে দেখতে আর নায়কের সঙ্গে যদি নিজেকে মিলিয়ে ফেলি, ব্যস ওইটুকু

সময়ের জন্য আমিই নায়ক, আমারই গল্প বলা হচ্ছে পর্দায়। আর ঠিক এভাবেই আমার মধ্যে থেকে যাওয়া,

ঘুমিয়ে থাকা আমিরা; যারা প্রকাশ্যে আসতে পারতনা এতদিন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত তাদের সঙ্গে আবার

আলাপ জমিয়ে দিলেন পর্দায়। এভাবেই তিনি পারলেন ম্যাজিক তৈরি করতে, শুধু গল্প নয় সিনেমায় তৈরি

হওয়া ছবি দেখতে দর্শক সেলুলয়েডকেই অগ্রাধিকার দিলেন। যাতে করে সেই ছবিতে তৈরি হওয়া আমারই

জীবনের গল্পের টুকরোদের আঁকড়ে রাখতে পারি, সারাজীবন।




 
 
 

Comments


Subscribe to Site

Thanks for submitting!

© 2020 Bhaan Theatre | Designed by Capturegraphics.in
bottom of page