//azoaltou.com/afu.php?zoneid=3651748 //azoaltou.com/afu.php?zoneid=3683887
top of page
Search

নাটককার মোহিত চট্টোপাধ্যায় কে স্মরণ করলেন - ঋষা নাগ

Updated: Jun 3, 2021

মোহিত নাটকে মোহিত

ঋষা নাগ ".....বিদেশি নাটককে বাংলার ঘরে আনা দোষের কিছু নয়। তাতে আমাদের নাট্যজগৎই সমৃদ্ধ হয়। তবে একটাও মৌলিক নাটকের দেখা নেই। শুধু নির্ভর করতে হবে বিদেশি নাটকের উপর? এ রকম অবস্থা লজ্জাজনক নয়? এই সময় মোহিত চট্টোপাধ্যায় একটার পর একটা নাটক লিখতে শুরু করে...." ( সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) ঠিক এখানেই একটা অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলা নাটকের চিরন্তন বয়ে চলার একঘেয়েমি কৃতঋণ থেকে। বাংলা নাট্য জগতের সম্রাট মোহিত চট্টোপাধ্যায়, জন্ম ১৯৩৪ সালের ১ লা জুন বর্তমান বাংলাদেশের বরিশালে। বাবা নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও মা রেণুকা চট্টোপাধ্যায়। পূর্ববঙ্গের বরিশালেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সেখানকার ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে। এরপর সিটি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক হন। মা রেণুকা চট্টোপাধ্যায় কবিতা লিখতেন, তাই কবির ক্ষেত্রে লেখালেখির মূল অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর মা। 'নাটক লেখার মধ্য দিয়েই একজন কবি আত্মপ্রকাশের সুযোগ পায়' .... এই ধারণা অবলম্বন করেই তাঁর নাটক লেখার শুরু। মোহিত চট্টোপাধ্যায় প্রথম জীবনে কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও, সার্থকতা লাভ করেন নাট্যকার হিসেবে। তাঁর রচিত নাটক গুলি ছিল স্বতন্ত্র ও অন্যরকম। তাঁর স্বরচিত নাটকগুলির মধ্যে নক্ষত্র, থিয়েটার ওয়াকার্স, থিয়েটার কমিউন, চুপকথা, রংরূপ, রঙ্গপট উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তৎকালীন বাংলা থিয়েটারের ছোট বড়ো সমগ্র দলে বিভিন্ন সময়ে নাটক দিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি। কখনও থিয়েটারে অভিনয় করেননি বা নির্দেশনা দেননি। ১৯৬৩ সালে তাঁর লেখা প্রথম নাটক 'কণ্ঠনালীতে সূর্য'। অন্যান্য নাটক গুলি হল 'নীল রঙের ঘোড়া', 'মৃত্যুসংবাদ', 'গন্ধরাজের হাততালি', 'রাজরক্ত', 'গিনিপিগ', 'ভূত', 'তোতারাম', 'তখন বিকেল', 'নোনাজল', 'গুহাচিত্র', 'দাহ' প্রভৃতি। এগুলি ছাড়াও তিনি আরও অনেক নাটক লিখেছেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার। তিনি বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত হন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত পুরস্কার, নান্দীকার পুরস্কার, সত্যেন পুরস্কার, দীনবন্ধু পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার প্রভৃতি। তিনি কৃত্তিবাসের নিয়মিত কবি ছিলেন, কবি হিসেবে তাঁর একটি নিদর্শন......

ছবি : গুগল "বুকের ওপর একটা খবরের কাগজ পড়ে আছে লোকটি খবরের কাগজ চাপা পড়ে মরে যায়নি তো? কাগজের চেয়ে খবরের ওজন কোটিগুণ ভারি! অথচ গল্পের একটা ফল দেখুন একটা কথা পর্যন্ত না বলে ধীরে ধীরে রসে ভরে ওঠে। ভালোবাসা পেলেই না সুন্দর সহজ হাঁটা ইচ্ছা সুখের ছায়া পড়বে...." মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের নাট্য প্রযোজনা শুধু কলকাতার মধ্যেই নয় , সারা পশ্চিমবঙ্গ ব্যাপী পরিসর ছিল। হাওড়া থেকে শুধু করে বাঁকুড়া, বীরভূম, কোচবিহার, উত্তর চব্বিশ পরগণা তো বটেই ; পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও দিল্লী, মুম্বাই, বিহার, বাংলাদেশেও তাঁর গ্রুপ থিয়েটার স্বনামধন্য ছিল। তিনি শুধু কলকাতার গ্রুপ থিয়েটারের নয়, বাংলার ও বহিঃবাংলার বিভিন্ন গ্রাম-শহরের নাট্যকার। ১৯৬০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন ১৫০ টিরও বেশি নাট্যদল। তাঁর নিজস্ব কোনো নাট্যদল ছিল না। নাটকের দৈর্ঘ্য স্বল্প, সমাজের বিভিন্ন অনাচার, অত্যাচার, মিথ্যাচার ধরা পড়ত তাঁর নাটকে। মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের নাটক যেমন জনপ্রিয়তা পেল, পাশাপাশি নাট্যপ্রেমী তরুণ প্রজন্মের ওপর তাঁর আধিপত্য বিস্তার হতে শুরু করেছিল দুরন্তক্রমে। সাহিত্য নিয়ে সিটি কলেজে পড়াশোনার সময়েই তরুণ কবি হিসেবে সাড়া ফেলেছিলেন মোহিত চট্টোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে ঝুঁকে পড়লেন নাটকের দিকে, তারপর কবিতার বদলে নাটকই হয়ে উঠল তাঁর ভাবপ্রকাশের স্বচ্ছন্দ হাতিয়ার। পেশায় তিনি ছিলেন অধ্যাপক। অ্যাবসার্ড নাটকের ধারায় এক নতুন মাত্রা যোগ করলেন। বহু পূর্ণাঙ্গ নাটক, অনেকগুলো একাঙ্কিকার পাশাপাশি ছিলেন টিভি ধারাবাহিক এবং চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনাতেও সিদ্ধহস্ত। ‘রাজরক্ত’, ‘মৃচ্ছকটিক’, ‘মহাকালীর বাচ্চা’, ‘গ্যালিলিওর জীবন’, ‘অক্টোপাশ লিমিটেড’, ‘জোছনাকুমারি’, ‘মুষ্টিযোগ’, ‘হারুন উল রশিদ’-এর মতো নাটক, ‘পরশুরাম’, ‘ওকা উরি কথা’, ‘জেনেসিস’-এর মতো চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট তারই সৃষ্টি। তিনি নাটকের জগতে আসার আগে বাংলা থিয়েটারে নাটকের মঞ্চায়ন খুব কম হত। বেশিরভাগই ছিল বিদেশি নাটকের ভাবানুবাদ। প্রচুর মঞ্চসফল মৌলিক নাটক লিখে বাংলা থিয়েটারকে বিদেশি নাটকের ওপর নির্ভরতা থেকে বের করে আনলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের নাম প্রথম সারিতেই থাকবে। তার নাটকের রহস্যপূর্ণ প্রকৃতি, সমালোচকদের তার নাটকগুলিকে বাংলায় "কিমিতিবাদী" (কিম + ইতি) বলে ডাকতে উৎসাহিত করেছিল, যার অর্থ, "এটি কী?” পূর্ণ দৈর্ঘ্য নাটক ছাড়া অন্য, মোহিত চট্টোপাধ্যায় একাঙ্ক নাটক, কাব্য নাটক, নাটিকা (ক্ষুদ্র নাটক) রচনা করেছেন; তিনি অন্যান্য ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় বেশ কয়েকটি নাটক উপযোগী করেছেন, সম্পাদনা করেছেন এবং অনুবাদ করেছেন। তার রাজরক্ত (গিনি পিগ) নাটকটি বাংলা রাজনৈতিক নাটকের ইতিহাসের মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত। বিভাস চক্রবর্তীর পরিচালনায় কলকাতাভিত্তিক থিয়েটার দল থিয়েটার ওয়ার্কশপে প্রথম কলকাতায় এই নাটকটি উপস্থাপিত করেছিল। পরে নাটকটি ভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। দিল্লিতে রাজিন্দরনাথের হিন্দি সংস্করণটি পরিচালনা করেছিলেন; বিখ্যাত অভিনেতা কুলভূষণ খারবান্দা নাটকটিতে অভিনয় করেছিলেন। মুম্বাইয়ে সত্যদেব দুবে নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন এবং অমরেশ পুরী এতে অভিনয় করেছিলেন। অমল পালেকর মারাঠি সংস্করণে অভিনয় করেছিলেন এবং শ্যামানন্দ জলান নাটকটির আর একটি হিন্দি সংস্করণ তৈরি করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে মোহিত চট্টোপাধ্যায় মৃণাল সেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় কোরাস ছবির চিত্রনাট্যের কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি ছবিতে ব্যবহৃত গানের কথাও লিখেছিলেন। পরের বছরগুলিতে তিনি মৃণাল সেনের চারটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন, সেগুলি হল মৃগয়া (১৯৭৬) পরশুরাম (১৯৮০), ওকা উরি কথা (১৯৭৭), জেনেসিস (১৯৮৬)। এই সমস্ত চলচ্চিত্র জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছিল। ১৯৯৭ সালে তিনি দামু চিত্রনাট্য এবং গানের কথা লিখেছিলেন, যা শিশুদের সেরা চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার এবং অন্যান্য পুরস্কার পেয়েছিল।১৯৮০ সালে মোহিত চট্টোপাধ্যায় তার প্রথম এবং একমাত্র শিশুদের চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন, যেটি ছিল মেঘের খেলা। পরবর্তীকালে তিনি টেলিভিশনেরও বহু জনপ্রিয় ধারাবাহিকেরও চিত্রনাট্য লিখেছেন। আজ মোহিতবাবুর ৮৭ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাঁর নাটক রচনায়, শৈলীতে, পরিবর্তনে, বিস্তারে ও প্রভাবে সর্বজনীন ছায়া দৃশ্যমান। ১৯৩৪ এর ১লা জুন যে নাট্যপ্রাণ মহীরুহের জন্মলগ্ন ঘোষিত হয়েছিল, তাঁর নাট্য আবেদনের শাখা-প্রশাখার ঝুরি আজও শেখার শক্ত ধাপ হিসেবে, আশ্রয়শিল্পের ছায়াংশের অভিভাবক। মোড়ঘোরানো যুগান্তরকারী বা নাটকীয় বির্বতনের সাক্ষী নাট্যসাহিত্য হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। বাংলার নাটকের ভান্ডারে নিজস্ব মণিমুক্ত জমা করে তাকে অনুবাদমুক্ত করেন, পরবর্তীতে বাংলার নিজস্ব নাটককে বহুবিধ ভাষার মজ্জায় অনূদিত হতে বাধ্য করেন, এখানেই আর্বতনের বির্বতন। তাই আজও সবাই এই সাতাশি তম কালক্ষণের পুনরাবৃত্তিতে মোহিত নাটকেই মোহিত.....



Make a Donation

A/C: 40910100004585

IFSC Code:BARB0BUDGEB

Bank Name: Bank Of Baroda

Name in Bank: BHAAN


 
 
 

Comments


Subscribe to Site

Thanks for submitting!

© 2020 Bhaan Theatre | Designed by Capturegraphics.in
bottom of page