//azoaltou.com/afu.php?zoneid=3651748 //azoaltou.com/afu.php?zoneid=3683887
top of page
Search

পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত: এক ছবির কবি' লিখলেন-সোমনাথ লাহা


সোমনাথ লাহা


কাব্যিকছন্দময়তা সেলুলয়েডে গাঁথেন বুদ্ধদেব


'ছোটি মোটি পিঁপড়াবোটি, তেরে মামা লাড্ডুলায়া.. লাল দরজা খোলদে'.. বাস্তব আর অবাস্তবের মধ্যেলুকিয়ে থাকা সেই দরজাটাখুলতে পারলেই তৈরি হয় ম্যাজিক।আর কবিমন যখন সেই ম্যাজিকরিয়েলিজমকে সেলুলয়েডে আঁকেন তখন পর্দায় আমরাদেখি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত র ছবি। যাঁরএক একটি ছবি আদতেযেন এক চিত্রকল্প। আরসেটি গাঁথা হয়েছে কবিতার পংক্তি দিয়ে। তাই তাঁর ছবির দৃশ্যকল্প এতমুগ্ধ করে দেয় দর্শকদের।এমনকি আকর্ষণ করে চুম্বকের মত।একাধারে একজন কবি, অধ্যাপকবুদ্ধদেব যখন সিনেমার প্রতিভালোবাসা থেকে ছবি তৈরিরজন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে উঠলেন, তিনিহয়ে গেলেন ছবির কবি। সমাজেরবাস্তবকে নিজের চোখ দিয়ে দর্শকদেরচেনানোর এই পথে তিনিআনলেন জাদু বাস্তবতাকে। তাঁরছবিকে বহু বিদেশি দর্শকও সমালোচক স্যারিয়েল আক্ষা দিলেও তিনি নিজে তামানতে নারাজ ছিলেন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর কথায়, "বাস্তবকে চারপাশে দেখতে পাচ্ছি। জীবন বাস্তবময়। কিন্তুএকটা সময়ের পরে বাস্তব আরইন্টারেস্ট করে না। বাস্তবআর অবাস্তবের মাঝখানে এমন জিনিস আছেযা বাস্তবটাকে অনেক বেশি হাইলাইটকরতে পারে।" তাই তাঁর ছবিরদৃশ্যকল্প যেন অবাস্তবের মধ্যেথেকে বাস্তব আর বাস্তবতার মধ্যেঅবাস্তবকে নিরন্তরভাবে খুঁজে চলার এক পথপরিক্রমা।



সেই কারণেই তাঁর সমসাময়িক অনান্যপরিচালকদের থেকে তাঁর ছবিরআঙ্গিক অনেকটাই আলাদা। আর সেটা দেখলেইবুঝতে পারা যায় এটিবুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ছবি। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তেরজন্ম দক্ষিণ পুরুলিয়ার আনাড়ার রেল কোয়ার্টার্সে। তাঁরবাবা তারকনাথ দাশগুপ্তছিলেন রেলের ডাক্তার। পুরুলিয়ার মাটিতে তাঁর বেড়ে ওঠাহলেও বাবার বদলির চাকরির সুবাদে তিনি বড় হয়েছেনমধ্যপ্রদেশের মানেন্দ্রাগড়, চিরিমিরি র মতো জায়গায়।এ বিষয়ে বুদ্ধদেব নিজেও বলেছেন, "ভাগ্যিস আমার ছোটবেলা কলকাতায়কাটেনি। বড় শহরের ছোটবেলায়বৈচিত্র্য কম। প্রায় একইজিনিস ঘটতে থাকে। তুলনায়ছোট জায়গায় নানা ধরণের ঘটনাঘটতেই থাকে।" এজন্যই তিনি বলেছিলেন "কলকাতায়আমি ১৫দিনের বেশি থাকতে পারিনা।এই শহরটার সঙ্গে আমার love & hate এর সম্পর্ক। এইশহরটা প্রতি মুহূর্তে একটা tension তৈরি করে। মনেহয় বুঝি এই আমারগোপনীয়তা দখল হয়ে গেল।" সেই কারণেই বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ছবি মানেই ওয়াইডঅ্যাঙ্গেল ফ্রেমে বিস্তীর্ণ প্রান্তর। মাথার উপর সুবিস্তৃত নীলাকাশ।ম্যাজিক আওয়ারে কাজ করা ছিলতাঁর অত্যন্ত পছন্দের। আকাশের রূপ,রঙ দেখেতিনি তাঁর ছবির দৃশ্যঠিক করতেন। আসলে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তেরছবি মানেই আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাধারণ মানুষেরপ্রতিচ্ছবি। পারতপক্ষে আমরা যাদের এড়িয়েচলি সেই সব মানুষেরমনের ভিতরে ঢুকে অনায়াস দক্ষতায়তাদের মনের কথা বেরকরে নিয়ে আসতে পারেন বুদ্ধদেব।তাই অতলে পৌঁছে গিয়েচরিত্রকে বোঝার আর এক‌ইসঙ্গেবোঝানোর দায়‌ও নিতেজানেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। সেই কারণেই তিনিড্রয়িংরুম ফিল্মমেকার নন। আর সেটাতিনি হতেও চাননি। তবেতিনি তাঁর মতো করেএন্টারটেনমেন্ট করতে চেয়েছেন দর্শকদের।সিনেমা ছিল তাঁর বিশ্বাসেরজায়গা। তাই তো বরাবরতিনি থেকেছেন তাঁর নিজের মতোকরে। বেঁচেছেন তাঁর মতো করে।কখনো তাই তাঁকে টোপহতে হয়নি। আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি তাঁর সৃষ্টিশীলতা।১৯৬৮ তে 'সময়ের কাছে' নামক শর্টফিল্ম দিয়েতাঁর কাজের সূচনা।



প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যর ছবি 'দূরত্ব' মুক্তিপায় ১৯৭৮ এ। সেইশুরু।আর তার পরিসমাপ্তি ঘটে২০১৮তে 'উড়োজাহাজ' এ এসে। আরএর মাঝে জাতীয় ওআন্তর্জাতিক আঙিনায় তাঁর ছবির সূত্রধরে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ঝুলিতে উঠে এসেছে একাধিকপুরষ্কার। জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে তাঁর ছবি। ১৯৮৯তে 'বাঘ বাহাদুর',১৯৯৩তে 'চরাচর', ১৯৯৭তে 'লাল দরজা', ২০০২তে 'মন্দ মেয়ের উপাখ্যান' এবং ২০০৮ এ 'কালপুরুষ' সেরা চলচ্চিত্র হিসেবেজাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়। সেরা নির্দেশকহিসেবে তিনি জাতীয় পুরস্কারপান ২০০০এ 'উত্তরা' এবং ২০০৫ এ 'স্বপ্নের দিন' এর জন্য।সেরাচিত্রনাট্য হিসেবে জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয় তাঁর ছবিফেরা (১৯৮৭তে)। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেওবুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ছবি রীতিমতো সমাদৃতহয়েছে প্রথম সারির চলচ্চিত্র উৎসবগুলিতে। ভেনিস, বার্লিন‌, লোকার্নোর মতো চলচ্চিত্র উৎসবেপুরষ্কৃত ও এক‌ইসাথেপ্রশংসিত হয়েছে তাঁর ছবি।১৯৮২ তেভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বুদ্ধদেবের ছবি 'গৃহযুদ্ধ' ফিপ্রেসকিঅ্যাওয়ার্ড পায়। ২০০০এ সিলভার লায়ন ফর বেস্ট ডিরেক্টরসন্মানে ভূষিত হয় 'উত্তরা'।১৯৮৮তে 'ফেরা' এবং ১৯৯৪তে 'চরাচর' বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গোল্ডেন বেয়ারের জন্য নমিনেশন পেয়েছিল।লোকার্নোতে তাঁর ছবি 'দূরত্ব' ক্রিটিক'স অ্যাওয়ার্ড পায়ও পরবর্তীতে এই চলচ্চিত্র উৎসবেবিশেষ জুরি পুরষ্কারে ভূষিতহয় বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ছবি 'নিম অন্নপূর্ণা'। ২০০৮ এমাদ্রিদ স্পেন( আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল) তাঁকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। এছাড়া এশিয়াপ্যাসিফিক, কার্লভি ভ্যারি, দামাস্কাস এর মতো বহুলচর্চিতচলচ্চিত্র উৎসবেও পুরষ্কৃত ও সমাদৃত হয়েছেতাঁর ছবি।



সত্তরোর্ধ্ব বুদ্ধদেবদাশগুপ্তের মধ্যে ছিল ভরপুর জীবনীশক্তি।তাই ডায়ালিসিস চলা অবস্থাতেও প্রাণপ্রাচুর্যেভরপুর হয়ে তিনি করেগিয়েছেন তাঁর ছবির কাজ।ক্লান্তির ছাপ হীন, বরংকাজ বা আর ভালোকরে বললে সৃষ্টির সাধনায়নিবিড় ভাবে মিলন থেকেছেনবুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। কারণ তাঁর প্রিয়বিষয় ও জায়গাগুলো পছন্দেরহয়ে উঠেছে কোনো না কোনোঅনুষঙ্গকে ঘিরে। তাই তিনি মনেকরতেন একা থাকাটা খুবদরকার। কারণ স্মৃতি অনেকইমেজ ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আর একান্তেস্যাঁতস্যাঁতে দেওয়ালের গায়ে, এমনকি মেঘের মধ্যেও মুখ খুঁজে বেড়াতেভালোবাসতেন তিনি। মনে মনে প্রতিনিয়ত‌ই ছবি করেবেড়ানো, বলা ভালো ছবিরসঙ্গে ওঠাবসা করেছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। আর তাই তিনিভেবেছেন সময়ের আগের কথা। যেগুলোনিজের ছবির মধ্যে দিয়েফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর মতে, "সময়েরআগের কথা ভাবতেই হয়সৃজনশীল মানুষকে। তারপর কি হবে? সেইকারণেই মোৎসার্ট, বাখ, বিথোভেন, রবীন্দ্রনাথেরসৃষ্টিরা অনন্ত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এঁরা চলে গেলেওএঁদের সৃষ্টি রয়ে গিয়েছে।" তাইগত ১০জুন বিশ্ব চরাচরে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বিলীন হয়ে গেলেও রয়েযাবে তাঁর সৃষ্টিরা। কারণতাঁর সৃষ্টির একটি নিজস্ব ভাষারয়েছে। পরিচালক হিসেবে এই স্বতন্ত্রতাই তাঁকেআলাদা জায়গা করে দিয়েছে। মানুষেরজীবনের একাকীত্বকে তাত্ত্বিকজায়গা থেকে বের করেএনে জীবনের গভীরে নিয়ে যায় বুদ্ধদেব দাশগুপ্তেরছবিগুলি।



 
 
 

Comentarios


Subscribe to Site

Thanks for submitting!

© 2020 Bhaan Theatre | Designed by Capturegraphics.in
bottom of page