'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু,দাপটে' বহুদূর' দিনাজপুরের বিখ্যাত 'দাপট-কালী'এর গল্প শোনালেন - বিধান,স্নিগ্ধা
- Avijit Mitra
- Jul 8, 2021
- 2 min read
Updated: Jul 10, 2021

লেখক : বিধান

লেখক : স্নিগ্ধা
দিঘির শীতল বাতাসের সঙ্গে দেবীর মাহাত্ম্য অনুভব করলে আধ্যাত্মিক ভয়ে শরীর
রোমহর্ষক হয়। এমনই অনুভব হবে হিলি ব্লকের, ধলপাড়া পঞ্চায়েতের চকদাপট
এলাকার দাপটকালী মাতার মন্দিরে পৌঁছালে। ঐতিহাসিক নিদর্শন থেকে বর্তমানের
গল্পকথা,। সবমিলিয়ে কালীশক্তির উপাসনায় এক রোমাঞ্চকর অনুসন্ধিৎসা গড়ে
তোলে। মাতৃ আরাধনার রীতি-নীতি থেকে পুণ্য অর্জন, সবটাই আনকোরা।
লোকমুখে প্রচলিত, কয়েকশো বছর পূর্বে শ্রী নদীর জলে ভেসে এসেছিলো দাপটকালী
মাতার ‘মুখা’ (মুখ আকৃতি বিশেষ,স্থানীয় নাম ‘চামুণ্ডা’)। সেসময় নদীর জল থেকে সেই
‘মুখা'; (চামুণ্ডা) তুলে নিয়ে পূজার্চনা শুরু করেছিলেন ধলপাড়া এলাকার কোনও এক
ব্যক্তি। তারপর থেকে পুজো হয়ে আসছে দাপটকালী মাতার। আবার ইতিহাস গবেষকরা
বলেন, সুপ্রাচীন পাল বা সেন আমল থেকেই দাপটকালী মাতার পুজো প্রচলিত ছিলো।
মন্দির প্রাঙ্গণে উদ্ধার হওয়া ইটের নির্দশন থেকে তার প্রমাণ মেলে। আবার মন্দিরে বেশ
কয়েকটি পাথরের মূর্তি থেকেও তার উল্লেখ পাওয়া যায়।
প্রত্যেক বছর চৈত্র সংক্রান্তি তিথিতে দাপটকালী মাতার বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয়।
৯ দিন ধরে চলে মায়ের বাৎসরিক পুজো। চৈত্র সংক্রান্তি তিথির ৯ দিন পূর্বে ঘট
প্রতিস্থাপনের মধ্যদিয়ে মায়ের পুজোর সূচনা হয়। তান্ত্রিক মতে মায়ের পুজো অনুষ্ঠিত
হয়। একজন ব্রাহ্মণ পুরোহিত ও একজন দেবাংশী, মায়ের পুজো করেন। মায়ের
পুজোর জন্য, ‘বিষহরি’ তালে নিজস্ব ঢাকের বাজনা রয়েছে। দাপটকালী মাতা মন্দিরে
‘চামুণ্ডা’ রূপে পূজিত হন।

ছবি : গুগল
মায়ের বাৎসরিক পুজোয় ‘ভক্ত’-এর (পূজার্চনার বিশেষ রীতি) প্রথা রয়েছে৷ মূলত
পুরুষেরা সাতদিন, পাঁচদিন, তিনদিনের ‘ভক্ত’(নিয়মানুবর্তী) থাকেন। ওই দিনগুলিতে
উপোস থেকে মায়ের পুজোয় অংশগ্রহণ করেন তারা। মানতপ্রার্থী মহিলারা চুল ছেড়ে
মাথায় গোবর, আলতা, সিন্দূর, দুধ দিয়ে ঠাকুরের গায়ে আলপনা দিয়ে মানত অর্পণ
করেন।পুণ্যার্থীরা মাথায় করে বাঁশের ডালায় ফলফলান্তি এনে,তা দিয়ে মায়ের কাছে
পুজো নিবেদন করেন। মায়ের পুজোয় পাঠাবলির রীতিও রয়েছে।
মায়ের পুজোয় উল্লেখযোগ্য হলো- পৈতা পরিধান পর্ব, খাঁপর পুজো, শ্মশান খেলা,
বাসলিকালীর পুজো, বুড়াকালীর পুজো, নাগর ভাঙা। দেবীর গর্ভগৃহের মূল পুজো
অনুষ্ঠিত হয় চৈত্র সংক্রান্তি তিথির দুপুরে। মায়ের সেই পুজো মধ্যাহ্নে সম্পন্ন করতে হয়।
রাত্রিতে মায়ের বিসর্জনের পুজো অনুষ্ঠিত হয়।

ছবি : গুগল
প্রবীণেরা বলেন- কয়েক দশক পূর্বে পুজোর সময়, মন্দিরের পার্শ্ববর্তী দিঘি থেকে ভেসে
উঠতে দেখা যেতো এক কাসার থালা। পুজোর সামগ্রী, দ্রব্যাদি পূর্ণ থাকতো থালায়।
পুজোর পরে সেই থালা দিঘিতে ভাসিয়ে দিতে হত। আবার গ্রামের কোনও মানুষের
কোনও প্রয়োজনে দিঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে মায়ের কাছে প্রার্থনা করলে, প্রয়োজনীয়
সামগ্রী কাসার থালায় করে ভেসে উঠত।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে, অনিয়মের কারণে মায়ের রোষে পড়ে
সেনারা। দুইজন সেনা জওয়ানকে সাপে কামড়ায়। মন্দিরে উপস্থিত তেঁতুল গাছ থেকে
সেই সাপ সেনা জওয়ানদের শরীরে পরে ও তারপরে তাদের দংশন করে। তারপর থেকে
সৈনিকদের তরফে মন্দিরে পূজার্চনা শুরু করা হয়। যুদ্ধজয়ের জন্য মানতও করেন
তাঁরা। মুক্তিযুদ্ধ জয় করে ফিরে যাবার সময় তাঁরা টিন দিয়ে মায়ের মন্দির নির্মাণ করে
দেন।

দাপটকালী মাতা ছাড়াও বিকটকালী মাতা বলেও এই মায়ের পরিচয় পাওয়া যায়।
দাপটকালী মাতার নাম থেকেই ধলপাড়া পঞ্চায়েতের দুটি গ্রামের নামকরণ হয়েছে।
চকদাপট ও কিসমতদাপট গ্রাম দুটির নাম মায়ের নাম থেকে অনুসৃত। কালক্রমে মায়ের
দৃষ্টিনন্দন মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে বর্তমানে। তারসঙ্গে আরও ৯টি ছোটো মন্দির
নির্মিত হয়েছে।
ঐতিহাসিকতা থেকে মাহাত্ম্য, আধ্যাত্মিকতা থেকে কালী চেতনার প্রসার, রোমহর্ষক
পর্যটন থেকে পুণ্য অর্জনের বিশ্বাস- এসবের সূত্রেই চির ঐতিহ্যবাহী ত্রিমোহিনীর
দাপটকালী মাতার মন্দির।
Make a Donation
A/C: 40910100004585
IFSC Code:BARB0BUDGEB
Bank Name: Bank Of Baroda
Name in Bank: BHAAN
Comentarios