//azoaltou.com/afu.php?zoneid=3651748 //azoaltou.com/afu.php?zoneid=3683887
top of page
Search

সমুদ্র গুহের লেখা 'প্রতিরোধের নাটক' চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতির বিরুদ্ধ সচেতনতা থেকে এর জন্ম পড়লেন


সৌরিক সামন্ত


" সংস্কৃতি হলো মানব সমাজের এমনই এক আঙ্গিনা যেখানে আধিপত্যের যেকোনও রূপের বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ তার অভিব্যক্তির প্রকাশকে খুঁজে পায়। অস্ত্র হাতে বিপ্লব সংঘটিত করার যে চিরাচরিত অভ্যস্ত পথ তার বিপরীতে অন্য এক খাতে এই প্রতিরোধ সদা বহতা নদীর মতো প্রবহমান। "

সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক অনুশাসন যখন দিনের পর দিন, যুগের পর যুগ সাধারণ মানুষের উপর চেপে বসেছে, কণ্ঠরোধ করেছে, তখনই দেশে দেশে কালে কালে সেই অনুশাসনের বেড়া ভাঙার জন্য সংগঠিত হয়েছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। ছবি, কবিতা, গান-এর পাশাপাশি সবথেকে যে শিল্প-মাধ্যমটির মধ্যে দিয়ে মানুষ প্রতিরোধের ভাষ্য নির্মাণ করতে পেরেছেন, সেটি থিয়েটার। থিয়েটার হয়তো সরাসরি বিপ্লব ঘটাতে পারেনি একথা সত্য, কিন্তু বিপ্লবের সমস্ত উপকরণকে মজুত করেছে, মজবুত করেছে। আর তাই, মানুষের প্রতিদিনের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, বেঁচে থাকা- এসবের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে থিয়েটার।

প্রচলিত নাটকের ধারাবাহিকতা থেকে মুক্ত করে থিয়েটারকে জনগণের কাছাকাছি আনার প্রয়াস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে বহু নাট্যবিদ করে গিয়েছেন। তাঁরা বুঝেছিলেন, থিয়েটারকে জনগণের সংগ্রামের শরিক করে তুলতে হবে। ফলে, দেশে দেশে, কালে কালে ভিন্ন সামাজিক অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে তৈরি হয়েছে ভিন্ন থিয়েটারের আঙ্গিক, শৈলী এবং তার উপস্থাপন। রোমা রোঁলা, এরভিন পিসকাটার, অগাস্তো বোয়াল, মায়ারহোল্ড, গ্রোটোস্কি, দারিও ফো, পিটার শ্যুমান, রিচার্ড শেখনার এবং অতি অবশ্যই ব্রেখট-এর প্রতিবাদী থিয়েটারের কথা বহুজনবিদিত। আমাদের মতো নাট্যশিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিবাদের থিয়েটার বলতে এই তালিকাকেই সর্বোত্তম মনে করতাম। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত সমুদ্র গুহ'র গ্রন্থ 'প্রতিরোধের নাটক', সেই ধারনার বাইরে প্রতিবাদের থিয়েটার নিয়ে এক দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আফ্রিকার, বিশেষত দক্ষিণ আফ্রিকা, ইসরায়েল, জাপান, চীন,প্যালেস্টাইন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক প্রমুখ দেশের থিয়েটারের মধ্যে দিয়ে জনজাগরণ এবং প্রতিরোধের অবিশ্বাস্য বর্ণনা পাই। যা একাধারে বিশ্ব রাজনীতিতে রাজনৈতিক অবস্থান এবং শাসন-শোষনের খণ্ডচিত্র দেখতে পাই, তেমনই একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসাবে প্রতিরোধের স্পৃহায় স্নাত হই নতুন করে। আরও একটা দিক দিয়ে আলোচ্য গ্রন্থটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। 'প্রতিরোধের নাটক' যে শুধুমাত্র অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার নাটক, তা বললে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অনেকক্ষেত্রেই প্রতিরোধের নাটক তৈরি হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাবনা, যাকে 'বিশ্বাস' বলে প্রতিষ্ঠিত করা হয়; তার বিপক্ষে। যেন যৌক্তিকতার বিরুদ্ধে যে গড্ডালিকাপ্রবাহ চলছে যাকে ‘প্যপুলার কালচার’ বলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে অন্যস্বরের সন্ধান করছে 'প্রতিরোধের নাটক'।

কেমন প্রতিরোধ? আর সেই প্রতিরোধকেই নাটকের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে হ'ল কেন? গ্রন্থটির ভূমিকায় সমুদ্র গুহ'র নিজস্ব অভিমতটি এরকম- 'এ দুনিয়ার হরেকরকম নাট্যধারার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো ''প্রতিরোধের নাটক''। একেক দেশে, একেক পরিস্থিতিতে গড়ে উঠেছে এর বুনোট, ধরন, নিজস্বতা। সচেতনভাবেই ভারতবর্ষের কথা বলিনি কারণ আমাদের দেশের চলনটা অদ্ভুতরকমের বিস্তর আলাদা। যেটা আরও গভীর গবেষণার দাবি রাখে'। এবং এই গ্রন্থটির পাঠক কে বা কারা হবেন, তার সম্পর্কেও একটি সুনির্দিষ্ট মত পাওয়া যায়,--' লেখাটা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে যারা দিন-রাতের পার্থক্য বোঝেন এবং অন্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস রাখেন তাদের জন্য'। প্রসঙ্গত, লেখকের ভূমিকাংশের এই অভিজ্ঞতার কথা, গোটা গ্রন্থের প্রতিটা পাতায় পাতায় তুলে ধরেছেন ইতিহাসের কালপর্বের সেই অমোঘ সত্যিকে যা অনিবার্যভাবে সত্য।

গ্রন্থটির সূচনাংশেই লেখক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নাৎসি জার্মানির হাতে দখলীকৃত ফ্রান্স এবং ক্লঁদ ভারমোরেলের লেখা প্রতিরোধের নাটক 'জাঁ এভেক নাউস'-এর প্রসঙ্গ টেনে আনলেও, লেখকের মতে প্রতিরোধের নাটক নামক নাট্য আন্দোলনের বিশেষ ধারার রূপকার তাঁরাই, যাঁরা নাট্যমঞ্চের সংলাপকে রাজনৈতিক বিদ্রোহের যথার্থ শ্লোগানে পরিণত করতে পেরেছেন, সেই দক্ষিণ আফ্রিকা-তেই শুরু হয় প্রকৃত Theatre of Resistance। সেখানের নাটকের বিষয়ে এলো আত্মপ্রত্যয়ের কথা। এলো কালো মানুষদের আত্মমর্যাদার কথা। উঠে এলেন মাতসেমেলা মানেকা এবং মেইসে মাপোন্নার মতো প্রতিবাদী বর্ণাঢ্য নাট্যব্যক্তিত্ব। যাঁরা তামাম আফ্রিকায় একটা বজ্রঘোষনা হাজির করলেন-' বিরোধিতার দিন শেষ, এবার যুদ্ধ সরাসরি'। কী রকম যুদ্ধ? লেখকের ভাষায়,-- 'সেসোথোতে একটা নিয়ম ছিল যে, যারা সাদা-দের বাগানে, বাগিচায়, বাড়িতে, ফার্মে যেখানেই কুঁয়ো খুড়বেন তারা কিন্তু একফোঁটাও জলপান করতে পারবেন না, সে আপনি যতই পরাক্রান্ত, তৃষ্ণার্ত হোন না কেন। নাটকে উঠে এলো সেই কুঁয়ো খননকারী কালো মানুষের কথা। দু হাত জড়ো না করে, সমগ্র ব্যবস্থাটাকে উপড়ে ফেলে দুহাতে জলপান করতে চায় সে। শুরু হলো শোষিতদের ঐক্যবদ্ধ করে শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান। এছাড়া অন্য কোনো বিকল্পও নেই।'

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদকে কেন্দ্র করে যে সামাজিক আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো থিয়েটারের সংস্পর্শে, তার-ই অনিবার্য পরিণতি- আফ্রিকার মুক্তি আন্দোলন। এবং সেই আন্দোলনের জন্ম দিলেন যিনি, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তি আন্দোলনের পথিকৃত Black Consciousness Movement-এর প্রণেতা স্টিভ বিকো (Steve Biko)। সত্তরের দশকে আবির্ভূত স্টিভ বিকোর সংগ্রাম, নাট্য-আন্দোলন নিয়ে সুদীর্ঘ আলোচনা করেছেন লেখক। সঙ্গে, ব্রাজিলের শিক্ষাবিদ পাওলো ফ্রেইরির মতাদর্শের প্রতি অমোঘটান কীভাবে স্টিভ বিকো-কে জননায়ক করে তুললো, তারও তথ্যানুসন্ধানী বর্ণনা দিয়েছেন সমুদ্র গুহ- 'তাই সব অর্থে স্টিভ বিকো'র এই আন্দোলন দ্রুত দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র। নাটকে উঠে এলো এক ভিন্ন মেজাজ, নতুন প্রত্যয়। মুক্তি সংগ্রামের মাঝখানে সংস্কৃতিকে দাঁড় করালো যা ইতিপূর্বের কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন করতে পারেনি'।

এর পরের অংশে লেখক স্টিভ বিকোর রক্তাক্ত ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন। শহীদের মৃত্যু বরণ করতে হয়েছিল স্টিভ বিকোকে। ১৯৭৭ সালে ইষ্ট কোপের একটি প্রিজন সেলে নির্মমভাবে পিটিয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় একটা গাড়ির সঙ্গে ঝুলিয়ে শত মাইল পথ ডিঙিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রিটোরিয়ায়, যেখানকার কারাগারে খুন করা হয় স্টিভ বিকোকে। এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না স্বৈরাচারী সরকারের কাছে। স্টিভ বিকোর প্রসঙ্গেই লেখক এমন আরও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক এবং নাট্যকর্মীদের উদাহরণ দিয়েছেন। নাট্যকার মাথেলি সেজি'কে তাঁর নাটক Shanti'র প্রযোজনার প্রথম রাতেই চলন্ত ট্রেনের সামনে ফেলে হত্যা করা হয়, বাকি কুশীলবদের সবাইকে টেরোরিস্ট আইনে বন্দি করা হয়। পরবর্তী সময়ে এই নাটক কিন্তু থেমে যায়নি। নাটকটি অন্যান্যরা করতে শুরু করলেন। একইভাবে ‘How Long’ নাটকের নাট্যকার গিবসন কেনেটকে বন্দি করা হল। একটার পর একটা নাটককে এবং নাটকের দলকে অবৈধ, বিপজ্জনক তকমা দিয়ে বাতিল করা হল। ততদিনে সাধারণ মানুষ নাটকের মধ্যে খুঁজে পেতে শুরু করেছে তাদের প্রতিবাদের ভাষা। গবেষক ম্যালরণের মতে ১৯৫৫ - ১৯৭৭-এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় দেড়শোটি প্রতিরোধের নাটক তৈরি হয়। এই উত্তাল কালপর্বে শাসকের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই নির্মিত হয়েছে লিউইস নাকোসির লেখা 'The Rhythm of Violence', জুলিয়াস ম্যাকানের 'Give Us This Day', মেইসে মাপোন্নার 'Sizwe Bansi is Dead', ' The Blood Knot' 'Hungry Earth', মাতসেমেলো মানেকার 'Egoli', পিটার মাখারির 'Long March', এমিলি মুরের 'Sofiatown' -এর মতো কালজয়ী প্রতিরোধের নাটক, প্রতিবাদের নাটক।

প্রতিরোধের নাটকের উতুঙ্গ কালপর্ব আশির দশক। আয়ারল্যান্ডের সিভিল রাইট মুভমেন্ট, গেরিলা যুদ্ধ, হাজার হাজার মানুষের জেলযাপন। জেলের ভেতরেই তৈরি হতে থাকল, একটার পর একটা নাটক। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক বস্তাপচা নীতির বিরুদ্ধে অরাজনৈতিক বন্দীদের মগজে সচেতনতা তৈরি করার লক্ষ্যে জেলের মধ্যে তৈরি হওয়া নাটক বাইরে চলে এলো। লেখকের বর্ণনায় সেই ঘটনার সামান্য বিবরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারা কঠিন। লেখকের বর্ণনায়-'সিগারেটের মধ্য দিয়ে খোল থেকে তামাক বার করে ছোট চিরকুটে লেখা সংলাপ বোঝাই সিগারেট বিনিময় হচ্ছে বন্দীদের যারা দেখা করতে আসতেন, তাদের মধ্যে। তারপর বাইরে তৈরি হচ্ছে গোটা নাটক'। আর এইভাবেই তৈরি হয়েছে 'Inside Out', 'Time Will Tell', 'Threshold', ' At the Black Pig's Dyke'- এর মতো একাধিক নাটক, যে নাটকগুলির সম্মিলিত আবেদনসুলভ সমবেত সংলাপ,--- ' Peace is not the absence of war. Peace is the absence of contradictions that create war.'

প্রতিরোধের নাটকের আরেকটি মূল্যবান অধ্যায় রচিত হয়েছে ইজরায়েলে, যার ধরনটা পূর্বকথিত দেশগুলির থেকে বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে আলাদা। ইজরায়েল মানে উগ্র আগ্রাসনবাদ, পুঁজিবাদী মডেল, যুদ্ধের অস্ত্র কেনা-বেচা, গুপ্তচরবৃত্তি, ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, সামগ্রিক অভ্যুত্থান, বেআইনি বন্দীশিবির, উগ্র ধর্মীয় জিগির। ইজরায়েল মানে গোটা আরব দুনিয়ার মুক্তিস্বপ্নকে ট্যাঙ্কের তলায় পিষে নিজেদের দখলদারি কায়েম করার উদগ্র নেশা। এরকম পরিস্থিতিতে এই দেশে যৌবনকে বিসর্জন দিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য। সেখানে সংস্কৃতি চর্চা, বিশেষত থিয়েটার চর্চা প্রায় সোনার পাথরবাটি। অথচ এর পরেও, হাইফার অত্যাধুনিক সামরিক ঘাঁটির অনতিদূরে নাটকের চর্চা হয়েছে। কারা করছে? জানলে অবাক হতে হয়, তার বেশিরভাগ করছেন মহিলারা। যুদ্ধ-সন্ত্রাস-দখলদারি যাদের মূলমন্ত্র, তাদের কাছে নাটক 'বাইতুল তোরাহ' মানে অহেতুক সময় নষ্ট। যেখানে পুরুষরা সমস্তকিছুর নির্ধারক, এবং তারা মনে করে নাটক ঐ 'বাইতুল তোরাহ', সেখানে মহিলারাই কুশীলব, তারাই সেই নাটকের দর্শক। এবং প্রতিটি নাটকে সন্তর্পণে নানা ঢাল ব্যবহার করে তারা নারী শোষন নির্যাতনের নির্মম সত্যকে প্রকাশ করছেন। এরকমই এক মহিলা যোদ্ধা নাট্যব্যক্তিত্ব আরনা মের খামিস।

প্যালেস্তাইন, লেবানন, সিরিয়ার সঙ্গে ইজরায়েলের অন্তহীন যুদ্ধে তৈরি হল অসংখ্য শরণার্থী শিবির। তৈরি হল প্যালেস্তাইনের মুক্তিযুদ্ধ 'ইন্তিফাদা'। তৈরি হল জেহাদ। তৈরি হল মধ্য এশিয়ার সব থেকে বড়ো শরণার্থী শিবির 'জেনিন'। এই 'জেনিন' শরণার্থী শিবিরে প্রতিরোধের নাটকের বীজ বুনে দিয়েছিলেন এক ইজরায়েলি মহিলা, তিনি আরনা মের খামিস। স্টোন থিয়েটার নামে আরনা মের খামিসের তৈরি দল জেনিন শরণার্থী শিবিরের বাচ্চাদের নিয়ে কাজ শুরু করে। যে শিশুদের প্রতিদিন কাঁদানে ধোঁয়া, স্মোক বোমার বিষাক্ত গ্যাস, একফোঁটা জল, একদলা খাবার আর একটু পাথরে পিঠ রেখে শোবার জন্য শিরদাঁড়ার গ্রন্থিগুলো তৈরি হতো, তাদের কাছে থিয়েটারের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার মতো কঠিন কাজটি করতে পেরেছিলেন আরনা মের খামিস। এর থেকেই পরবর্তী সময়ে তৈরি হয় 'ফ্রিডম থিয়েটার'। প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের জন্য ফ্রিডম থিয়েটার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া এই থিয়েটারে রাইফেল ছেড়ে সশস্ত্র বেশ কিছু জেহাদি যোগদান করে। যেমন রাবিয়া টার্কম্যান। পরিচালক মহম্মদ মৌহি। এঁরা সশস্ত্র প্রতিরোধের যোদ্ধা থেকে প্রতিরোধের নাটকে সামিল হন। পরবর্তী সময়ে আরনা মের খামিসের ছেলে জুলিয়ানো মের খামিস-এর নেতৃত্বে ফ্রিডম থিয়েটার আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যদিও ২০১১ সালে জুলিয়ানোকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। তবু থামানো যায়নি ইজরায়েলের নাট্যগতি। ' Little Lantern', ' Fragments of Palestine', 'Suicide Note from Palestine', ' Sho Kamen?- What Else' প্রমুখ উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্য দিয়ে প্রতিরোধের এই নাটকগুলি আর শুধু ইজরায়েল বা প্যালেস্তাইনে সীমাবদ্ধ নেই, বরং সীমান্তের গন্ডি ছাড়িয়ে, মধ্যপ্রাচ্যের গন্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর নাট্যোমোদী মানুষের মধ্যে।

গ্রন্থের একেবারে শেষ পর্বে, লেখক ভারতবর্ষকে বাদ দিয়ে অনান্য দেশের প্রতিরোধের নাটকের তথ্য ও সম্পর্ক সূত্রে প্রাপ্ত এই ধরনের নাটকের যে অভিমুখ নির্দিষ্ট হয়েছে, তার মূল্য বৈশিষ্ট্যকে আলাদা করে উল্লেখ করেছেন। প্রতিরোধের নাটক নিয়ে সমুদ্র গুহ'র অভিমত গুলো- (এক) প্রতিরোধের নাটকের সারবত্তা হল রাজনৈতিক ভাবধারায় প্রাণিত আদ্যোপান্ত একটি রাজনৈতিক নাটক। (দুই) প্রতিরোধের নাটক কোনও নির্দিষ্ট একটি রাজনীতির প্রতিভূ নয়, বরং চাপিয়ে দেওয়া যেকোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সচেতনতা থেকেই তার নির্মাণ, প্রস্তুতি এবং প্রযোজনা। (তিন) বিশ্বায়ন এবং সর্বাত্মক পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সমস্ত লোকসংস্কৃতি, দেশজ ঐতিহ্য, পরম্পরার ধারাবাহিকতা, শিকড়ের উৎস সন্ধান নিয়েই নিজস্ব জনজাতির প্রয়োজনের দাবিতে গড়ে ওঠে প্রতিরোধের নাটক। (চার) প্রতিরোধের নাটক মানুষকে সক্রিয় জনচেতনার উপস্থাপনায় সঞ্জীবিত করে, দর্শকের ভাবনার মর্মবস্তুতে ধাক্কা দেওয়ার ভেতর দিয়েই। দীক্ষা দেওয়া নয়, প্রশ্ন তৈরি করাই প্রতিরোধের নাটকের মূল উদ্দেশ্য। (পাঁচ) প্রতিরোধের নাটক কৌশলধর্মী। রাষ্ট্রের কাছে এই নাটক পাল্টা বুলেটের মতো। তাই একই নাটক সময়ের বিচারে, স্থান-কাল বুঝে বারবার পাল্টে যেতে পারে, পাল্টে যেতে পারে নাটকের উপস্থাপন এবং অবয়ব। তাই এক অর্থে বলাই যায় প্রতিরোধের নাটক এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার। (ছয়) বিশ্বায়িত সংস্কৃতির পরিবর্তে স্থানিক দেশজ সংস্কৃতির কথা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই নাটকে। গ্লোবাল ভাবনা আর লোকাল পরিকল্পনা, সব মিলিয়ে 'গ্লোবাল' ধারায় পরিবেশিত হয় প্রতিরোধের নাটক। (সাত) প্রতিরোধের নাটক পপুলার কালচারের ধ্বজাধারীদের কাছে অত্যন্ত বিপজ্জনক।

গ্রন্থটির একেবারে শেষে লেখক সমুদ্র গুহ প্রতিরোধের নাটকের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে একটি অসামান্য উদাহরণ প্রসঙ্গে নন্দলাল বসুর কথা তুলে ধরেছেন,যেখানে নন্দলাল বসু বলতেন,--" গাছ যখন আঁকবে তখন পাশ্চাত্য ভঙ্গিতে আঁকবে না, গাছ নিচ থেকে ওপরে ওঠে, ওপর থেকে নিচে নামে না।" ------ লেখকের কথা উদ্ধৃত করেই এই লেখাটি শেষ করব,-- ' এখানেও তাই হবে, প্রতিরোধের নাটকের যা হবে সব নিচের মহল থেকেই হবে। হবেই। '

প্রতিরোধের নাটক সমুদ্র গুহ প্রকাশনা - আর.বি.এন্টারপ্রাইস প্রকাশকাল- জানুয়ারি, ২০২১ প্রচ্ছদ- মনীষ দেব মূল্য - ১২০/



 
 
 

Comments


Subscribe to Site

Thanks for submitting!

© 2020 Bhaan Theatre | Designed by Capturegraphics.in
bottom of page